কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা অন্যের সুখে ঈর্ষা করেন না, বরং সুখ পান। কারো অকল্যাণ কামনা করেন না। কেউ অকল্যাণ করলেও তাঁর কল্যাণ করেন। অন্যের উন্নতিতে আনন্দ পান। কাউকে পীড়ন করেন না। তাঁরা অন্যের উপকার করেন। অন্যেরা যাতে সুখে থাকে তার উপদেশ দেন। কখনই কাউকে হিংসা করেন না। নিজের ক্ষতি হলেও কারো অমঙ্গল কামনা করেন না। এ মনোভাব ও আচরণ একটি মহৎ গুণ। এ নৈতিক গুণটির নাম অহিংসা। অহিংসা ধর্মের অঙ্গ।
অহিংস ব্যক্তি সকলের শ্রদ্ধা পান। জীবনে অনেক বড় হতে পারেন। হিংসা মানুষের মনকে ছোট করে দেয়। আর ছোট মনে কোনো বড় কাজ করা যায় না। তাই বড় হতে হলে আমাদের অহিংস হতে হবে।
নিম্নে মহর্ষি বশিষ্ঠের অহিংসার একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো।
প্রাচীন ভারতের কথা। বশিষ্ঠ নামে একজন ঋষি ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্রহ্মর্ষি। অনেক সুখ্যাতি তাঁর। সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। ভক্তি করে। তাঁর কথা সবাই সম্মানের সঙ্গে মান্য করে।
তখন বিশ্বামিত্র নামে একজন ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন। সাধনা করে তিনি রাজর্ষি হয়েছিলেন। কিন্তু এতে তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি ব্রহ্মর্ষি হতে চান। বশিষ্ঠের মতো ব্রহ্মর্ষি। কিন্তু ব্রহ্মর্ষি হওয়া এত সহজ ব্যাপার নয়। তিনি মনে মনে বশিষ্ঠকে হিংসা করতেন।
একদিন অনেক লোকজন নিয়ে বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের আশ্রমে গেলেন। গিয়ে বললেন, তাঁরা খুব ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত।
হঠাৎ এত লোকের ক্ষুধা-তৃষ্ণা মেটানো কঠিন কাজ। কিন্তু বশিষ্ঠের জন্য কঠিন হলো না। তাঁর আশ্রমে ছিল একটি কামধেনু। তার কাছে চাইতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও পানীয় পাওয়া গেল। বশিষ্ঠ তা দিয়ে বিশ্বামিত্র ও তাঁর লোকজনদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা মেটালেন।
এসব দেখে বিশ্বামিত্রের হিংসা আরও বেড়ে গেল। তিনি বশিষ্ঠের কাছে কামধেনুটি দাবি করলেন। কিন্তু কামধেনুটি বশিষ্ঠের অত্যন্ত প্রিয়। তাই তিনি বিশ্বামিত্রের প্রস্তাবে সম্মত হলেন না ।
নিচের ছকটি পূরণ করি:
১। অহিংস ধর্মের | |
২। অহিংস ব্যক্তি সকলের | |
৩। বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের কাছে চেয়েছিলেন |
বিশ্বামিত্র এতে ক্ষেপে গেলেন। তিনি জোর করে ধেনুটি নিতে চাইলেন। তখন কামধেনু থেকে অনেক যোদ্ধার সৃষ্টি হলো। তাদের সঙ্গে বিশ্বামিত্র ও তাঁর লোকদের ভীষণ যুদ্ধ হলো। যুদ্ধে বিশ্বামিত্রের পরাজয় হলো। তিনি বশিষ্ঠের কাছে ক্ষমা চাইলেন। বশিষ্ঠ তাঁকে ক্ষমা করে দিলেন এবং আশীর্বাদ করলেন ব্রহ্মর্ষি হওয়ার। বশিষ্ঠের আশীর্বাদে বিশ্বামিত্র ব্রহ্মর্ষি হয়েছিলেন। এ ঘটনায় বশিষ্ঠের অহিংসা ধর্ম সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
যাঁরা মহৎ তাঁরা কখনই নিজের কথা ভাবেন না। সবসময় পরের কথাই ভাবেন। এর বিনিময়ে তাঁরা কিছু চান না। এই যে পরের মঙ্গল করার মনোভাব, একেই বলে পরোপকার। পরোপকার করা ধর্মের একটি অঙ্গ ।
হিন্দুধর্ম মতে সকল জীবের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন। তাই জীবের উপকার করা মানেই ঈশ্বরের সেবা করা। জীবের সেবা করলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। পরের উপকার করার মধ্য দিয়ে এক পরম আনন্দ পাওয়া যায়। এতে মনের প্রসারতা বাড়ে। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি বৃদ্ধি পায়। সমাজে শান্তি বিরাজ করে। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির সৃষ্টি হয়। পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসতে শেখে। কাজেই আমরাও পরের উপকার করব। এতে আমাদের মন বড় হবে। আমাদের সমাজ সুন্দর হবে।
এখানে দৃষ্টান্ত হিসেবে ভীমের পরোপকারের একটি ঘটনা তুলে ধরা হলো।
আমরা জানি যে, মহাভারতের কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে ভীষণ শত্রুতা ছিল। কৌরবেরা ছিলেন দুষ্ট প্রকৃতির। একবার তাঁরা কৌশলে কুন্তীসহ পাণ্ডবদের বনে পাঠিয়ে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাণ্ডবেরা বুদ্ধিবলে বেঁচে যান। তখন তাঁরা ব্রাহ্মণবেশে একচক্রা নগরে বাস করতেন। সেখানে এক ব্রাহ্মণের গৃহে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
একদিন কুন্তী দেখেন ব্রাহ্মণের ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। তিনি কাছে গিয়ে কান্নার কারণ জানতে চাইলেন। ব্রাহ্মণ বললেন, "নগরের অদূরে একটা বন আছে। সেখানে থাকে এক রাক্ষস। নাম বক। প্রতিদিন তার আহারের জন্য একজন মানুষ, দুটি মহিষ এবং অনেক ভাত দিতে হয়। নতুবা সে সবাইকে খেয়ে ফেলবে। আজ আমার পরিবারের পালা। যে কেউ একজনকে রাক্ষসের কাছে যেতে হবে। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়তে চাচ্ছে না । এজন্য সবাই কাঁদছে।"
ব্রাহ্মণের কথা শুনে কুন্তী বললেন, ‘আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমার পাঁচ ছেলে। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ভীম খুব শক্তিশালী। সে যাবে ঐ রাক্ষসের কাছে। ত
ব্রাহ্মণ বললেন, ‘সে হয় না, আপনারা আমাদের শরণার্থী। আপনাদের কোনো অকল্যাণ আমরা করতে পারি না। কারণ ঐ রাক্ষসের কাছে যে যাবে, সে আর ফিরে আসবে না ।"
নিচের ছকটি পূরণ করি :
১। পরের মঙ্গল করার নাম | |
২। পরোপকার করলে সমাজে | |
৩। কুন্তীর দ্বিতীয় ছেলে |
কুন্তী তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘আপনি ভয় পাবেন না। ভীম ঐ রাক্ষসকে মেরে তবে ফিরবে। তবে এ কথা কাউকে বলবেন না।"
কুন্তী ব্রাহ্মণকে রাজি করিয়ে ভীমকে পাঠালেন রাক্ষসের কাছে। রাক্ষস তখন তার আস্তানায় ছিল না। ভীম তখন বসে মনের আনন্দে খাবারগুলো খাচ্ছিলেন। এমন সময় রাক্ষস এসে ভীমকে খাবার খেতে দেখে ভীষণ ক্ষেপে গেল। সে একটা গাছের কাণ্ড ভেঙে তেড়ে এলো। তারপর গাছের কাণ্ডটা ছুড়ে মারল ভীমের দিকে। ভীম মুচকি হেসে বাঁ হাত দিয়ে সেটা ধরে ছুড়ে ফেলে দিলেন। এতে রাক্ষসটা আরও ক্ষেপে গেল। এবার সে দৌড়ে গিয়ে ভীমকে জাপটে ধরল। ভীম উঠে দাঁড়িয়ে এক আছাড়ে রাক্ষসটাকে মেরে ফেললেন। এর ফলে ঐ ব্রাহ্মণ পরিবারসহ নগরের সবাই বক রাক্ষসের হাত থেকে রেহাই পেল । বক রাক্ষস মারা গেছে শুনে নগরের সবাই আনন্দ করতে লাগল। আর অন্য রাক্ষসরাও ঐ বন ছেড়ে অন্যত্র চলে গেল। কিন্তু কুন্তী যেহেতু নিষেধ করেছেন, সেহেতু ব্রাহ্মণ সকলকে বললেন, ‘এক পরোপকারী মহাপুরুষ আমাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে বক রাক্ষসকে মেরেছেন। ’
১। ___ ব্যক্তি সবসময় সকলের মঙ্গল কামনা করেন ৷
২। বশিষ্ঠের আশ্রমে ছিল একটি ___ ৷
৩। বশিষ্ঠের আশীর্বাদে বিশ্বামিত্র ___ হয়েছিলেন।
৪। পাণ্ডবেরা ব্রাহ্মণবেশে ___ নগরে বাস করতেন।
৫। পাণ্ডবদের মধ্যে ___ ছিলেন খুব শক্তিশালী।
১। বড় হতে হলে আমাদের ২। বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের মতো ৩। বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের কাছে চেয়েছিলেন ৪। হিন্দুধর্ম মতে সকল জীবের মধ্যেই ৫। অহিংসা পরম | ধর্ম । তাঁর কামধেনুটি। ব্রহ্মর্ষি হতে চেয়েছিলেন। অহিংস হতে হবে। আশীর্বাদ। ঈশ্বর আছেন। যজ্ঞের অশ্বটি। |
১। অহিংসা কী?
২। বিশ্বামিত্র কেন বশিষ্ঠকে হিংসা করতেন ?
৩। কামধেনু কাকে বলে ?
৪। পাণ্ডবেরা বেঁচে গিয়ে কোথায় বাস করতেন?
৫। ভীম রাক্ষসটাকে কীভাবে মেরেছিলেন ?
১। অহিংসা কাকে বলে? বুঝিয়ে লেখ।
২। বশিষ্ঠ কীভাবে বিশ্বামিত্রকে আপ্যায়ন করলেন ?
৩। পরোপকারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
৪। ব্রাহ্মণের ঘরে কান্নার রোল উঠেছিল কেন ?
৫। নগরবাসী বক রাক্ষসের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা পেয়েছিল?
আরও দেখুন...